গৌরীশ নন্দী: স্যাট নিউজ: ০৬ অক্টোবর: হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রীতি এবং ভাতৃত্ববোধের মহান নিদর্শন দেখা গেল করিমগঞ্জে । একজন হিন্দু লোকের শেষকৃত্য করলেন কয়েকজন মুসলমান লোক মিলে । সম্পূর্ণ হিন্দু রীতিনীতির মধ্যে দিয়ে মুসলমান লোকরা মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে শ্মশানের যাবতীয় নিয়ম পালন করে সৎকার করলেন হিন্দু ব্রাহ্মণ একজন লোকের ।
রাজনৈতিক প্ররোচনায় দেশে যতই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের কথা শুনা যাক না কেন, সমাজে কিন্তু আজও কায়েম আছে হিন্দু-মুসলমানের সমন্বয় এবং ভাতৃত্ববোধ। এরই এক নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় করিমগঞ্জ শহরে । করিমগঞ্জে ২ নম্বর ওয়ার্ডের সেটেলমেন্ট রোডে বিদ্যার্থী লেনে থাকা অসীম চক্রবর্তী বর্তমানে লেনটির একমাত্র হিন্দু পরিবার । ৭০ ঊর্ধ্ব অবিবাহিত এক ভাই এবং এক বোনের পরিবার । আত্নীয় স্বজনের সাথে তাদের যোগাযোগ নেই বহুদিন থেকে । কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগ সহ বৃক্ষ রোগেও ভুগছিলেন অসীম চক্রবর্তী। রবিবার রাতে অধিক অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রতিবেশী সৈয়দ মুজিব আহমেদ এবং টিপু সুলতান চৌধুরী মিলে তাকে করিমগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করান। সোমবার ভোরের দিকে তিনি হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ খবর দুই-একজন আত্মীয়কে দিলে তারা কেউই উপস্থিত হননি।
পরবর্তীতে প্রতিবেশী মুক্তার হোসেন, রশিদ আহমেদ চৌধুরী, হাজী সানুর আলি, সৈয়দ মুজিব আহমেদ, টিপু সুলতান চৌধুরী সহ আরো কয়েকজন মিলে মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে করিমগঞ্জ শহরের সুভাষ নগরস্থিত শ্মশানঘাটে নিয়ে যান । সেখানে সম্পূর্ণ হিন্দু রীতি নিয়ম মেনে মুসলমান লোকরা আরো দুজন হিন্দু লোকের সহযোগিতায় মৃতদেহ সৎকার করেন।
উল্লেখ্য, গত বছরেও প্রায় একই এলাকায় অনুরূপ একটি সম্প্রীতির বৃহৎ নিদর্শন দেখা গিয়েছিল। এলাকার স্বর্গীয় নিত্য ভূষণ দাসের ঘরে হোসনা খাতুন নামের একজন মুসলমান মহিলা প্রায় ৬০ বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন। তিনি ঐ পরিবারে মাতৃসম আদর যত্ন পেয়েছিলেন । শেষ বয়সে প্রায় 10 বছর ধরে অসুস্থতার জন্য শয্যাশায়ী থাকার ফলে বিছানাতেই মলমূত্র ত্যাগ করতেন। এগুলো পরিষ্কারের কাজ সেই হিন্দু পরিবারের লোকরাই করতেন। পরবর্তীতে গতবছর তিনি মারা গেলে মর্ম বেদনাতে ভেঙে পড়েছিলেন পরিবারের লোক। কিন্তু ৬০ বছর হিন্দু পরিবারের থেকে মারা গেলেও শেষকৃত্য কিন্তু মুসলমান রীতি অনুযায়ীই করেছিলেন হিন্দু পরিবারটির লোকরা । স্থানীয় কয়েকজন মুসলমান লোক এনে নিজেরা কাঁধে নিয়ে গিয়ে মহিলাকে কবরস্থ করান ।
বর্তমান সময়ে চতুর্দিকে হিংসা হানাহানি খবর পাওয়া গেলেও করিমগঞ্জ শহরের এ ধরনের দুটি দৃষ্টান্ত দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাতৃত্ববোধের নিদর্শন গোটা রাজ্য এবং দেশের লোককে নিশ্চয়ই এক ইতিবাচক চিন্তা ধারায় আনতে বাধ্য করাবে।