নিউজ ডেস্ক:স্যাট নিউজ:১৭ সেপ্টেম্বর: বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। মহালয়ার ভোরেই সূচনা হয়ে যায় জাতীয় উৎসবের। দশভূজা দেবীর আরাধনা সূচিত হয় মহালয়ার মাধ্যমে। চন্ডী পাঠ, মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজার মধ্য দিয়ে মর্তলোকে আহ্বান জানানো হয় দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। এবছর আশ্বিন মাসে দুটি অমাবস্যা থাকায় মলমাস হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে। ফলে মহালয়ার ৩৪ দিন পর শুরু হবে শারদীয় দূর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ রোধে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বেঁধে দেওয়া হয়েছে বহু বিধি নিষেধ। কোভিড প্রটোকল মেনেই বৃহস্পতিবার সকালে মহালয়ায় শামিল হলেন করিমগঞ্জবাসী। মুখে মাস্ক লাগিয়ে রাজপথে নামেন শহরবাসী। করোনা আতঙ্কের মধ্যেও পিতৃপুরুষের উদ্দেশে তর্পন করতে কুশিয়ারার ঘাটে ভীড় জমান বহু মানুষ।
মহালায়া, বাঙালি জাতির কাছে এক বিশেষ দিন। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চন্ডী পাঠের মাধ্যমে এইদিন জাগরিত হয় বাঙালি সমাজ। 'জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিণী...' গানে ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘুম ভাঙে সবার। মহামায়ার আহ্বান জানিয়ে এদিন শারদপ্রাতে জেগে উঠেন বাঙালিরা। কুশিয়ারার ঘাটে তর্পনের সঙ্গে মিশে যায় আগমনী সুর। পিতৃপক্ষের অবসানে শুরু হয় দেবীপক্ষের। আর এর সাথে শুরু হয়ে যায় বাঙালির সর্ববৃহৎ জাতীয় উৎসবের কাউন্টডাউন। কিন্তু এবছর একটু ব্যতিক্রম। আশ্বিন মাস মল মাস থাকায় মহালয়ার ৩৪ দিন পর দুর্গাপূজা । শাস্ত্র মতে এই মল মাসে কোন শুভ কাজ হয় না। তাই ঘরের মেয়ে উমাকেও পিতৃলয়ে আসার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৩৪ দিন। অন্যান্য বছর এই সময়টাতে মণ্ডপগুলোতে শেষ তুলির টান দিতে ব্যস্ত থাকেন শিল্পীরা। করিমগঞ্জ জেলা সদরের যে কয়েকটি বিগ বাজেটের পুজো হয় সেখানেও কাজ প্রায় শেষ হয়ে যায়। মৃৎশিল্পালয় গুলোতে মায়ের মূর্তি তে শেষ তুলির টান দেন মৃৎশিল্পীরা। কিন্তু এবছর এখানেও ব্যতিক্রম। করোনা অসুরের প্রকোপ পড়েছে বাঙালির জাতীয় উৎসবে। প্রতিদিন বেড়ে চলা সংক্রমনের উপর দৃষ্টি রেখে জেলা প্রশাসন তথা সরকার জারি করেছে বহু নিয়ম নির্দেশিকা। মহালয়ার প্রভাতে কিভাবে চলাফেরা করতে হবে সে নিয়েও করিমগঞ্জ প্রশাসন নীতি নির্দেশিকা বেঁধে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে বীরেন্দ্র কৃষ্ণের কন্ঠে চণ্ডীপাঠ শোনার মধ্যে দিয়ে জেগে উঠেন করিমগঞ্জবাসী। কিন্তু প্রশাসনের ঘোষণা মাথায় রেখে তেমন জনজোয়ার লক্ষ্য করা যায় নি রাজপথে। তবে একেবারেই যে কম সংখ্যক লোক বেরিয়েছিলেন মহালয়ার প্রভাতে সেটাও নয়। শহরের মেইন রোড স্টেশন রোড এলাকায় কিছুটা জনসমাগম পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় আগমনীর বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান দেখা যায়নি এ দিন। ঝাঁকে ঝাঁকে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার চলাফেরাও পরিলক্ষিত হয়নি। প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী তিন-চারজন করে লোক দেখা গেছে একসাথে চলাফেরা করতে। কুশিয়ারার ঘাটে তর্পণে ও কোভিড প্রটোকল মেনেই তর্পণ কার্য সম্পন্ন হয়েছে। মানুষ যাতে অপ্রয়োজনে জমায়েত না করেন সেদিকে নজর রেখে মোতায়ন করা হয়েছিল পুলিশ বাহিনী ও। কিন্তু মানুষের সতর্কতাও এদিন পরিলক্ষিত হয়। প্রায় সকলেই মুখে মাস্ক ব্যবহার করে বেরিয়েছেন মহালয়ার প্রভাতে।
এদিকে অন্যান্য বছর মহালয়ার দিনে বেশ কয়েকটি প্যান্ডেলে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয়। মৃৎশিল্পালয় থেকে মণ্ডপে যাত্রা করে মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তি। কিন্তু মল মাস হওয়ার দরুন এবছর সেখানেও তেমন একটা ভিড় নেই। মৃত শিল্পালয় গুলিতে মূর্তির কাজ খুব একটা শেষ হয়নি। যেহেতু পুজোর আরো ৩৫ দিন বাকি রয়েছে সুতরাং ধীরে ধীরে মায়ের মূর্তি তৈরির কাজ চলছে। তাছাড়া এখনো অনেক মন্ডপের কাজ শুরু হয়নি। করোনার প্রভাব কাটিয়ে মন্ডপ তৈরিতে হাত দেবেন পুজো কমিটির কর্মকর্তারা। তথাপি করোনা আবহের মধ্যে ও জাতীয় উৎসব নিয়ে ধীরে ধীরে মেতে উঠছেন করিমগঞ্জবাসী। অনেকেই আশার আলো দেখছেন, হয়তো মা'র আগমনের পূর্বে পরিস্থিতি আরও কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠবে ।