স্যাট নিউজ, আগরতলা, ১১ অক্টোবর:
ত্রিপুরায় বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সনাক্তকরণের দাবিতে ২৩ অক্টোবর রাজ্যব্যাপী ২৪ ঘণ্টার বনধের আহ্বান জানিয়েছে রাজ্যের সিভিল সোসাইটি। এর নেতৃত্বে রয়েছেন রাজ্যের শাসক দলের সহযোগী টিপরা মোথা-র বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা।
আগরতলার বিধায়ক হোস্টেলে আয়োজিত এক সাংবাদিক বৈঠকে বনধের ঘোষণা দেন দেববর্মা। তিনি জানান, বনধটি মূলত অবৈধ বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সনাক্তকরণ ও বহিষ্কারের দাবিকে ঘিরে সংগঠিত হবে। পাশাপাশি আরও সাতটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি নিয়ে আন্দোলন চালানো হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি উল্লেখ করেন প্রথমে এই বনধের তারিখ ছিল ১৩ অক্টোবর, তবে দীপাবলি উৎসবের কারণে জনগণের অসুবিধা এড়াতে সেটি দশ দিন পিছিয়ে ২৩ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়েছে।
দেববর্মা বলেন, সিভিল সোসাইটির পক্ষ থেকে উত্থাপিত আটটি দাবির মধ্যে প্রধান হল—কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী অবৈধ বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সনাক্তকরণ। প্রতিটি জেলায় ডিটেনশন ক্যাম্প বা আটক শিবির স্থাপন। বিএসএফ ও আসাম রাইফেলসের যৌথ স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গঠন করে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ রোধ করা। এছাড়া ত্রিপুরায় ইনার লাইন পারমিট প্রবর্তন। টিপ্রাসা চুক্তি (Tiprasa Accord) দ্রুত কার্যকর করা। কোকবরক ভাষার জন্য রোমান লিপির স্বীকৃতি প্রদান। ভুয়ো তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি (SC/ST) সনদপত্র বাতিল করা। ২০২৪ সালে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তি (Tripartite Agreement) — যার অন্তর্ভুক্ত ছিল ATTF ও NLFT — তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
টিপরা মোথা দলের এই বিধায়ক সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “আমরা বারবার রাজ্য সরকারকে সতর্ক করেছি, কিন্তু তারা নিরব থেকেছে। ত্রিপুরায় অবৈধ বিদেশি অনুপ্রবেশ এখন এক গভীর নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক সঙ্কট সৃষ্টি করছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক স্পষ্ট নির্দেশ দিলেও রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না।” তিনি অভিযোগ করেন, অসমে যেমনভাবে অনুপ্রবেশ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, ত্রিপুরায় তেমন কোনও দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি। তার বক্তব্য, “রাজ্যের সরকার জানে কেন তারা এই বিষয়ে চুপ রয়েছে। কিন্তু জনগণ চুপ করে থাকবে না।”
দেববর্মা আরও বলেন, “আমরা কোনও রাজনৈতিক লাভের জন্য এই আন্দোলন করছি না। এটি টিপরাসা তথা ত্রিপুরার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক অধিকার এবং অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। সরকারের উদাসীনতার বিরুদ্ধে এটি এক ন্যায়সঙ্গত গণআন্দোলন।”
বিধায়ক দেববর্মা বলেন, “টিপ্রাসা অ্যাকর্ডে বহু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। বিধানসভা অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী ড. মানিক সাহা যেসব ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা একেবারেই অসন্তোষজনক।” তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই এই চুক্তির প্রতিটি দফা দ্রুত কার্যকর হোক— বিশেষ করে ভূমি, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ সম্পর্কিত বিষয়গুলো।”
দেববর্মা জানান, কোকবরক ভাষার জন্য রোমান লিপির স্বীকৃতি আদিবাসী সমাজের আবেগ ও পরিচয়ের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। তিনি বলেন, “এটি শুধু ভাষার প্রশ্ন নয়, আমাদের আত্মপরিচয়ের প্রশ্ন। রোমান লিপি ছাড়া কোকবরক ভাষার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা সম্ভব নয়।”
তাছাড়া, রাজ্যে বেড়ে চলা ভুয়ো জাতি সনদের অপব্যবহার নিয়েও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁর দাবি, অনেক অ-আদিবাসী ব্যক্তি ভুয়ো নথি তৈরি করে তপশিলি শ্রেণির সুযোগ নিচ্ছে, যার ফলে প্রকৃত উপভোক্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
বিধায়ক সতর্ক করেন, “২৩ অক্টোবরের বনধ শুধুমাত্র এক দিনের প্রতিরোধ। যদি সরকার আমাদের দাবির বিষয়ে নিশ্চুপ থাকে, তাহলে এই আন্দোলন আরও তীব্র হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পথে লড়ব, কিন্তু পিছিয়ে যাব না।”
তিনি রাজ্যের জনগণ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে বনধ সফল করতে সহযোগিতার আহ্বান জানান। তাঁর মতে, এই বনধ কোনও রাজনৈতিক দলের নয়, বরং রাজ্যের মানুষের অস্তিত্ব ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার প্রতীক।