
আপনার কি আধার কার্ড বানানো হয়ে গেছে .. যদি না হয় আগামিতে বিপদে পড়তে পারেন ।অসম সরকার বড়সড় সিদ্ধান্ত নিল আধার কার্ডকে ঘিরে। রাজ্যে বসবাসকারী ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে নাগরিকদের আর নতুন আধার কার্ড দেওয়া হবে না। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই ঘোষণা করেন। সরকারের এই পদক্ষেপে ইতিমধ্যেই নানা মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে অসমে জনসংখ্যার তুলনায় যথেষ্ট বেশি সংখ্যক আধার কার্ড ইস্যু হয়ে গিয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অসমে আধারের প্রাপ্যতা দাঁড়িয়েছে জনসংখ্যার ১০২ শতাংশে। অর্থাৎ, যতো মানুষের থাকার কথা তার থেকেও বেশি আধার কার্ড ইস্যু হয়ে গিয়েছে। ফলে নতুন করে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সাধারণ নাগরিকদের আধার কার্ড দেওয়ার প্রয়োজন আর নেই বলেই মনে করছে সরকার। তবে, সধারনদের ক্ষেত্রে সেপ্টেম্বর মাস পর্ষন্ত খোলা থাকবে আধারের পোর্টাল ।
কিন্তু সব ক্ষেত্রেই কড়াকড়ি হবে না। তফসিলি জাতি (SC), জনজাতি (ST) এবং চা শ্রমিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এখনও আধার কভারেজ পুরোপুরি হয়নি। তাঁদের ক্ষেত্রে আধার কার্ডের প্রাপ্যতা বর্তমানে মাত্র ৯৬ শতাংশ। তাই সেই জনগোষ্ঠীর জন্য আরও এক বছর আধার আবেদন চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র প্রশাসনিক কারণে নয়, নিরাপত্তার বিষয়টিও বড় কারণ। তাঁর কথায়, “অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা যাতে আধার নথিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, তাই এই পদক্ষেপ। আমরা চাই না, কেউ অবৈধভাবে অসমে ঢুকে আধার কার্ড সংগ্রহ করে ভারতীয় পরিচয় নিয়ে নিক।” তিনি আরও দাবি করেন, গত এক বছরে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের একাধিক চেষ্টা ব্যর্থ করেছে নিরাপত্তারক্ষীরা। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন অনুপ্রবেশকারীকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর মতে, শুধু আটক করলেই হবে না, দীর্ঘমেয়াদে এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। তাই আধারকে অস্ত্র বানিয়ে ভুয়ো পরিচয় সৃষ্টির পথ পুরোপুরি বন্ধ করাই সরকারের লক্ষ্য।এছাড়া মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর শুধুমাত্র “বিরলের মধ্যে বিরলতম” ক্ষেত্রে কোনও প্রাপ্তবয়স্ককে আধার দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রেও কঠোর প্রক্রিয়া মানতে হবে। জেলা পুলিশ এবং ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পর জেলা কমিশনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। সরকারের এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে নাগরিকদের জন্য। শিশু ও কিশোরদের ক্ষেত্রে আগের নিয়মই বহাল থাকবে। পাঁচ বছরের কম বয়সিদের জন্য যেমন আলাদা ধরনের আধার নথি রয়েছে, তেমনই ১৮ বছরের কম বয়সিরাও আবেদন করতে পারবেন। শিশুদের আধার ইস্যুতে কোনও নতুন বিধিনিষেধ আনা হয়নি বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
অসম সরকারের এই নতুন সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। একদিকে প্রশাসনিক যুক্তি, অন্যদিকে নিরাপত্তার কারণ—দুই মিলিয়েই এই পদক্ষেপকে কঠোর কিন্তু প্রয়োজনীয় বলে মনে করছে সরকার। তবে এর প্রভাব বাস্তবে কতটা পড়বে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী কয়েক মাস।